
গোপালগঞ্জ প্রেসক্লাবকে কেন্দ্র করে চলমান অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের জেরে সাংবাদিক মো. শিহাব উদ্দিন মোল্লাকে ডেকে নিয়ে বিনা মামলায় আটক করেছে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। প্রায় ১২ ঘণ্টা পর তাকে এনসিপি কেন্দ্রী সংঘর্ষের মামলায় আসামি করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়। এ ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন বাংলাদেশ মফস্বল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএমইউজে) কেন্দ্রীয় সভাপতি সোহেল আহমেদ সাধারণ সম্পাদক শিবলী সাদিক খান। নেতৃবৃন্দ গভীর উৎকন্ঠা প্রকাশ করে বলেন, যে ঘটনায় সাংবাদিক এর জড়িত থাকার সংশ্লিষ্টতা নাই এরুপ ঘটনায় সন্দেহ পোষণ করে কারাগারে প্রেরণ অমানবিকতার বহির্প্রকাশ দ্রুত সুষ্ঠু তদন্ত ও ন্যায় বিচারের স্বার্থে সাংবাদিক সিহাব এর মুক্তি দাবি করেন।
গত বুধবার (১৩ আগস্ট) রাত ৮টার দিকে গোপালগঞ্জ জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবনের সামনে থেকে ডিবি পুলিশের একটি দল তাকে আটক করে। শিহাব প্রেসক্লাব গোপালগঞ্জের সদস্য এবং বাংলাদেশ মফস্বল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএমএসইউ) গোপালগঞ্জ জেলা শাখার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক।
জানা যায় প্রেসক্লাবে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি অপসারণকে কেন্দ্র করে সভাপতি জুবায়ের হোসেন ও সাধারণ সম্পাদকপক্ষের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছিল। ১০ আগস্ট সকালে ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব এসএম সাব্বির বঙ্গবন্ধুর ছবি পুনরায় টাঙিয়ে দেন এবং তা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। ওই ঘটনার পর থেকেই গ্রেফতার ও পুলিশী হয়রানির অভিযোগ উঠতে থাকে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, প্রেসক্লাব সভাপতি জুবায়ের হোসেন বিএনপি রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত এবং বর্তমানে আরাফাত রহমান কোকো ক্রীড়া পরিষদের গোপালগঞ্জ জেলা সভাপতি। অপরদিকে মহাসচিব এসএম সাব্বির আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। শিহাব ওই সময় ভিডিও ধারণকারীদের মধ্যে ছিলেন বলেও জানা গেছে।
এ ঘটনার পর বৃহস্পতিবার রাতে এসআই জুবায়েরের নেতৃত্বে ডিবি পুলিশের একটি দল ‘পুলিশ সুপার ডেকেছেন’ বলে শিহাবকে থানায় নিয়ে যায়। পরে কোনো লিখিত মামলা ছাড়াই তাকে আটক দেখানো হয়। দীর্ঘ ১২ ঘণ্টা পর তাকে গোপালগঞ্জে এনসিপি সমাবেশকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের মামলায় আসামি করা হয়।
এ বিষয়ে গোপালগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।
এদিকে স্থানীয়রা মনে করছেন, সাংবাদিক শিহাবের গ্রেফতার রাজনৈতিক প্রভাবিত পদক্ষেপ। তারা অভিযোগ করেন, কারাগারে তার সঙ্গে বৈরী আচরণ করা হচ্ছে। এমনকি পরিবারের পক্ষ থেকে জেল একাউন্টে ২০০০ টাকা জমা দেওয়া হলেও মাত্র ১৫০০ টাকা জমা হয়েছে বলে জানানো হয়। এছাড়া মাইগ্রেন সমস্যার কারণে চিকিৎসকের পরামর্শে নিয়মিত ওষুধ (টাফনিল) সেবন করলেও জেলগেটে ওষুধ পৌঁছে দেওয়ার পরও সপ্তাহব্যাপী তা হাতে পাচ্ছেন না তিনি।
এ নিয়ে সচেতন মহলে প্রশ্ন উঠেছে—কোন প্রভাবশালী মহলের নির্দেশে একজন সাংবাদিক এভাবে হয়রানির শিকার হচ্ছেন? সাধারণ মানুষের অভিমত, এ ধরনের ঘটনা অতীতের রাজনৈতিক সরকারের দলীয় প্রভাবিত পুলিশি কর্মকাণ্ডের কথা মনে করিয়ে দিচ্ছে, যা পুলিশের প্রতি জনআস্থা আরও ক্ষুণ্ন করছে ।