দশমিনায় সেতুর অভাবে চরম দুর্ভোগে ১৫ গ্রামের মানুষ
মোঃ মিজানুর রহমান, স্টাফ রিপোর্টার:
পটুয়াখালী জেলার দশমিনা উপজেলার বেতাগী সানকিপুর ইউনিয়নের, খারিজা বেতাগী এলাকার জমির মৃধা বাজার সংলগ্ন সুতোবাড়িয়া নদীর উপর সেতুর অভাবে চরম দুর্ভোগে ১৫ টি গ্রামের বাসিন্দা। স্কুলে যেতে হয় ছোট্ট খেয়া নৌকায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে। এই নদী পার হয়ে প্রতিদিন স্কুলে যেতে হয় খাদিজা বেতাগী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কমলমতি শিশু সহ খারিজা বেতাগী মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও জাফরাবাদ বি শরিয়াতিয়া দাখিল মাদ্রাসার শিক্ষক সহ ছাত্র ছাত্রীদের। জমির মৃধার বাজারে রয়েছে একটি কমিউনিটি ক্লিনিক। যার সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে নদীর পূর্বপাড়ের মানুষ। হাজী জমির মৃধা বাজার এলাকার সেতুটি ৮ বছর আগে ভেঙে পড়ায় এই দুর্ভোগ চরমে পৌছে গেছে। সেতুটি ভেঙে যাওয়ায় ইউনিয়নটি দুই ভাগে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
২০১৬ সালের ১৪ ডিসেম্বর বালুবোঝাই একটি কার্গোর ধাক্কায় সেতুর মাঝখানের অংশ ভেঙে গেলে চার শিশুসহ পাঁচজন নদীতে পড়ে যায়। চারজন সাঁতরে তীরে উঠতে পারলেও প্রথম শ্রেণীতে পড়ুয়া নুরসাত জাহান (৬) নামের একটি শিশু নিখোঁজ থাকে। পাঁচ দিন পর নুরসাতের মরদেহ নদীতে ভাসমান অবস্থায় পাওয়া যায় । বালুবোঝাই কার্গোটিও ঘটনাস্থলে ডুবে রয়েছে। এখনো সেতুটি মেরামত কিংবা নতুন করে নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। বেতাগী সানকিপুর ইউনিয়নের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে সুতাবড়িয়া শাখানদী। নদীর পূর্ব পারে মর্দনা, জাফরাবাদ, খারিজা বেতাগীর একাংশ ও তাফালবাড়িয়ার একাংশ। পশ্চিম পারে রামবল্লভ, দাবাড়ি, চিংগরিয়া, চন্দ্রাবাজ এবং খারিজা বেতাগী, তাফালবাড়িয়া ও বকুলবাড়ীয়া ইউনিয়নের একাংশ। এই ১৫ গ্রামের বাসিন্দাদের সহজ যোগাযোগ সংযোগ ছিল হাজী জমির মৃধা বাজার এলাকার খারিজা বেতাগী মাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংলগ্ন সেতুটি।
উপজেলার ঠাকুরের হাটসংলগ্ন পরিত্যক্ত লোহার সেতুটি সরিয়ে এনে বেতাগী সানকিপুর ইউনিয়নের হাজী জমির মৃধা বাজার এলাকায় স্থাপন করা হয়েছিল। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে এই সেতু স্থাপন করতে ব্যয় হয় ১০ লাখ টাকা। লোহার বিমের ওপর আরসিসি কংক্রিট ঢালাই প্লেট বসানো ১৫০ ফুট লম্বার এই সেতুর মাঝখানে প্রায় ২৫ ফুট অংশ ভেঙে নদীতে পড়ে গেছে।
এখন স্কুল চলাকালীন সময়ে ছোট্ট ডিঙি নৌকায় শিক্ষার্থীরা নদী পারা পার হয়। তারা সকলেই নদীর পূর্ব পারের বাসিন্দা ও পশ্চিম পারের খারিজা বেতাগী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ছাত্র ছাত্রী।সেতুটি ভেঙে যাওয়ায় শিক্ষার্থীদের উপস্থিতির হার কমে গেছে। অনেক শিক্ষার্থী পড়ালেখা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। তার মধ্যে ছাত্রীর সংখ্যাই বেশি।বঞ্চিত হচ্ছে উপজেলা সুস্থ কমপ্লেক্সের সেবা থেকেও। যার মূল কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে এই সেতু। শিক্ষার্থী সহ অসুস্থদের ছোট্ট খেয়া নৌকায় পারাপার হচ্ছে। এতেকরে সব সময় আতঙ্কের মধ্যে থাকতে হয় শিক্ষার্থী ও লোকজনকে। সেতুটি ভাঙার পর ইউনিয়নটি বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। নতুন একটি সেতুর জন্য এলজিইডি কার্যালয়ে বারবার অনুরোধ জানানো হলেও উদ্যোগ নেওয়া হয়নি এখনও। এই ব্রিজ টি হলে এলাকার জনগণের উপজেলা শহরে যেতে সময় লাগে ২০ মিনিট। এখানে খেয়া নৌকা থাকে সকাল ৬ টা থেকে বিকাল ৬ টা পর্যন্ত। রাতে উপজেলার সাথে যোগাযোগ করার কোন ব্যাবস্থা নেই। রাতের বেলা রোগী নিয়ে উপজেলায় যেতে ১৮ কিলোমিটার পথ ঘুরে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স যেতে সময় লাগে ১ ঘন্টা ১০ মিনিট। এতে রোগীর মৃত্যুর ঝুঁকি নিয়ে উপজেলা হাসপাতালে যেতে হয়। এই ব্রিজ টি হলে মাএ ১৫/২০ মিনিট সময় লাগবে উপজেলায় যেতে। তাই সব দিক বিবেচনা করে ব্রিজ টি দ্রুত নির্মাণ করার জন্য অনুরোধ ও জোর দাবি জানাচ্ছেন স্থানীয় জনগণ।